আস্তে আমীন বলার দলীল সমূহের পর্যালোচনা

Aste Ameenعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ: يُخْفِي الْإِمَامُ أَرْبَعًا : التَّعَوُّذُ، وَبِسْمِ اللَّهِالرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَآمِينَ، وَرَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ 

১. উমার(রা) বলেন, “চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও রব্বানা লাকাল হামদ।” (কানযুল উম্মাল, ৮/২৭৪, হা/২২৮৯৩; বিনায়াহ, ২/১৯৬; আল-মুহাল্লা, ২/২৮০)

তাহক্বীকঃ

এই হাদীছটি মুনক্বাতি হওয়ার কারণে যঈফ। কারণ হাদীছটি আবদুর রহমান বিন আবী লায়লা বর্ণনা করেছেন উমার(রা) হতে। আর আবদুর রহমান বিন আবী লায়লা উমার(রা) থেকে শোনেন নাই। (হাফিয মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৩৯৪৩)

ইমাম ইবনে আবু হাতিম বলেন, “এটা কি সঠিক যে আবদুর রহমান বিন আবী লায়লা উমার(রা) থেকে শুনেছেন?” তার পিতা ইমাম আবু হাতি বললেন, “না।” (ইবনে আবু হাতিম, মারাসীল, রাবী নং ২১৩)

এছাড়াও আবী মা’মার ও ইবরাহীম নাখয়ী (ইবনে আবু হাতিম, মারাসীল, রাবী নং ১) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন উমার(রা) হতে। আর তারা দু’জনও উমার(রা) থেকে শোনেন নাই।

সুতরাং হাদীছটি প্রমাণিত নয়।

 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَضْرَمِيُّ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، ثنا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ أَبِي سَعْدٍالْبَقَّالِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ عَلِيٌّ، وَابْنُ مَسْعُودٍ لَا يَجْهَرَانِ بِبِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَلَابِالتَّعَوُّذِ، وَلَا بِآمِينَ

 ২. আবী ওয়াইল(র) বলেন, আলী(রা) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও। (তাবারাণী, মু’জামুল কাবীর, হা/৯৩০৪; ইমাম হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ২/১০৮, হা/২৬৩২)

তাহক্বীকঃ

হাদীছটি যঈফ। কারণ হাদীছটির সানাদে সাঈদ বিন মারযাবান আবু সাঈদ বাকাল নামক এক রাবী রয়েছেন।

ইমাম হায়ছামী বলেন, তিনি ছিক্বাহ ও মুদাল্লিস। (ইমাম হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ২/১০৮, হা/২৬৩২)

ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীছ। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ৮১১)

ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে যঈফ। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি কিছুই নন। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম আবু হাতি বলেন, তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় না। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম আবু যুর’আহ বলেন, তার হাদীছে দুর্বলতা আছে এবং তিনি মুদাল্লিস। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি যঈফ। (কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ২৭০)

ইমাম ইজলী বলেন, তিনি যঈফ। (ইজলী, আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ৬১৪)

হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, তিনি যঈফ এবং মুদাল্লিস। (তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ২৩৮৯)

এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন। (হাফিয মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ২৩৫১; ইমাম যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৩২৭১)

এছাড়া সাঈদ বিন মারযাবান আবু সাঈদ বাকাল মুদাল্লিস এবং মুদাল্লিস রাবীর আন শব্দে বর্ণিত হাদীছ দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। হাদীছটি যঈফ হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ। আর একজন মুদাল্লিসের হাদীছ তখনই গ্রহণ করা যাবে যখন উক্ত রাবী ‘হাদ্দাছানা’ বা ‘সামি’তু’ বলবে অথবা উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছের শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ থাকবে। কিন্তু উক্ত হাদীছের কোন শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ নেই। যেগুলো রয়েছে তা সবই দুর্বল।

أبو كريب نا أبو بكر بن عياش عن ابى سعيد عن ابى وائل قال لم يكن عمرو على يجهرانببسم الله الرحمن الرحيم ولا بآمين 

৩. আবী ওয়াইল(র) বলেন, উমর(রা) ও আলী(রা) বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না। তেমনি আমীনও। (ইবনে তুরকিমানী, আল-জাওহারুন নাকী, ২/৪৮)

তাহক্বীকঃ

হাদীছটি যঈফ। কারণ হাদীছটির সানাদে সাঈদ বিন মারযাবান আবু সাঈদ বাকাল নামক এক রাবী রয়েছেন।

ইমাম হায়ছামী বলেন, তিনি ছিক্বাহ ও মুদাল্লিস। (ইমাম হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ২/১০৮, হা/২৬৩২)

ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুনকারুল হাদীছ। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ৮১১)

ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে যঈফ। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি কিছুই নন। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম আবু হাতি বলেন, তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় না। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম আবু যুর’আহ বলেন, তার হাদীছে দুর্বলতা আছে এবং তিনি মুদাল্লিস। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২৬৪)

ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি যঈফ। (কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ২৭০)

ইমাম ইজলী বলেন, তিনি যঈফ। (ইজলী, আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ৬১৪)

হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, তিনি যঈফ এবং মুদাল্লিস। (তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ২৩৮৯)

এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন। (হাফিয মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ২৩৫১; ইমাম যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, রাবী নং ৩২৭১)

এছাড়া সাঈদ বিন মারযাবান আবু সাঈদ বাকাল মুদাল্লিস এবং মুদাল্লিস রাবীর আন শব্দে বর্ণিত হাদীছ দলিল হিসেবে অগ্রহণযোগ্য। হাদীছটি যঈফ হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ। আর একজন মুদাল্লিসের হাদীছ তখনই গ্রহণ করা যাবে যখন উক্ত রাবী ‘হাদ্দাছানা’ বা ‘সামি’তু’ বলবে অথবা উক্ত রাবীর বর্ণিত হাদীছের শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ থাকবে। কিন্তু উক্ত হাদীছের কোন শাওয়াহিদ ছহীহ হাদীছ নেই। যেগুলো রয়েছে তা সবই দুর্বল।

 

أَبِي حَمْزَةَ عَنْ إبْرَاهِيمَ النَّخَعِيِّ عَنْ عَلْقَمَةَ، وَالْأَسْوَدِ، كِلَاهُمَا عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ:يُخْفِي الْإِمَامُ ثَلَاثًا : الِاسْتِعَاذَةُ، وَبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَآمِينَ

 ৪. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) বলেন, “ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ ও আমীন।” (আল-মুহাল্লা, ২/২৮০)

তাহক্বীকঃ 

উপরোক্ত হাদীছটি যঈফ। কারণ এর সানাদে রয়েছেন আবী হামযাহ মাইমুনা।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি মাতরূকুল হাদীছ। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৭৬৪)

ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি কিছুই নন। তার হাদীছ লেখা যাবে না। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ১০৬১)

ইমাম আবু হাতি বলেন, তিনি শক্তিশালী নন। তার হাদীছ লেখা যাবে। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ১০৬১)

ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। (কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৫৮১)

হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, তিনি যঈফ। (তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৭০৫৭)

এছাড়াও আরো অনেকেই এই রাবীর সমালোচনা করেছেন। (হাফিয মিযযী, তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৬৩৪৬)

شُعْبَةُ هَذَا الحَدِيثَ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ حُجْرٍ أَبِي العَنْبَسِ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ وَائِلٍ، عَنْأَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ: {غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ} [الفاتحة: 7]،فَقَالَ: «آمِينَ» وَخَفَضَ بِهَا صَوْتَهُ

৫. ওয়াইল বিন হুজর(রা) বলেন, “রসূল(স) যখন ‘غَيْرِ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (সূরা ফাতিহা) পাঠ করতেন তখন আমীন বলতেন এবং তার কণ্ঠস্বর নীচু করতেন।” (তিরমিযী, হা/২৪৮ এর শেষাংশ; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩১৬, হা/১৮৮৫৪)

তাহক্বীকঃ

উপরোক্ত হাদীছটি শায। কেননা একই রাবী থেকে আমীন উচ্চস্বরে বলার ছহীহ হাদীছ রয়েছে। (তিরমিযী, হা/২৪৮; আবু দাউদ, হা/৯৩২; দারাকুতনী, হা/১২৬৭; দারিমী, হা/১২৮৩, সানাদ ছহীহ)

ইমাম বুখারী বলেন, “শু’বাহ এর হাদীছের তুলনায় সুফিয়ানের (দীর্ঘস্বরে আমীন বলার) হাদীছটি বেশী ছহীহ। কেননা শু’বাহ এই হাদীছের কয়েকটি জায়গায় (৩টি) ভুল করেছেন।

(১) তিনি সানাদে হুজর আবুল আম্বাস এর কথা বলেছেন অথচ তিনি হলেন হুজর বিন আম্বাস। তার উপনাম হল আবুস সাকান।

(২) আলকামাহ বিন ওয়াইলের নাম অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন অথচ এই সানাদে আলকামাহ উল্লেখ হবে না। প্রকৃত সানাদটি হল, ওয়াইল বিন হুজর(রা) থেকে হুজর বিন আম্বাস।

(৩) শু’বাহ এর বর্ণনায় আছে خفض بها صوته “তার কণ্ঠস্বর নীচু করতেন” অথচ প্রকৃত কথা হল مد بها صوته “তার কণ্ঠস্বর দীর্ঘ করতেন।” (তিরমিযী, হা/২৪৮ এর শেষাংশ)

ইমাম আবু যুর’আহ বলেন, “শু’বাহ এর হাদীছের তুলনায় সুফিয়ানের (দীর্ঘস্বরে আমীন বলার) হাদীছটি বেশী ছহীহ।” (তিরমিযী, হা/২৪৮ এর শেষাংশ)

ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীছটি শায। (নাসিরুদ্দীন আলবানী, তাহক্বীক তিরমিযী, হা/২৪৮)

শু’আইব আরনাউত্ব বলেন, “তার কণ্ঠস্বর নীচু করতেন” ব্যতীত হাদীছটি ছহীহ। (শু’আইব আরনাউত্ব, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩১৬, হা/১৮৮৫৪)

হাফিয যুবায়ের আলী জাই বলেন, শু’বাহ এর হাদীছটি শায। (যুবায়ের আলী জাই, তাহক্বীক তিরমিযী, হা/২৪৮)

সূরা ফাতিহার পর জোরে আমীন বলা সুন্নাত। আমীন হল দু’আ। এর অর্থ (হে আল্লাহ) তুমি কবুল কর। আমরা যেকোনো দু’আ করে আমীন বলি যাতে আল্লাহ আমাদের উক্ত দু’আ কবুল করেন। তাই আমাদের সকলের এই সুন্নাত মেনে চলতে হবে।

তাই আমাদের সকলের উচিত তাক্বলীদ মুক্ত হয়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করা এবং মেনে চলা। আল্লাহ আমাদের সকলকে হিদায়াত দান করুক। আমীন।

অনুবাদ ও সংকলনঃ  সত্যান্বেষী  রিসার্চ  টীম

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।


Leave a comment