বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবেবরাত এর পর্যালোচনা – ০২

Barabari Charachari - 02সূচনা:  এই প্রবন্ধটি মাসিক আল কাউসারে প্রকাশিত আব্দুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ এর বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবেবরাত” এর পর্যালোচনা। শাইখ আব্দুল মালেক বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক বড় একজন হানাফী আলেম, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার আমিনুত তালিম ও শান্তিনগর আজরুন কারীম জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব। নিচে আব্দুল মালেক সাহেবের প্রবন্ধটি থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে সাথে তার পর্যালোচনা।

এই পর্বটি পড়ার আগে, অনুগ্রহ করে এর আগের পর্বটি পড়ুন। তা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

আব্দুল মালেক – ০৭:  হাদীসটির সনদ বিষয়ক আলোচনা। উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার কিতাবুস সহীহ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদীস। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী (রহঃ) শুআবুল ঈমান এ (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী আল মুজামুল কাবীর ও আল মুজামুল আওসাত এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে কিতাবুস সহীহ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীস সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্‌তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯, লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১।

পর্যালোচনা  ০৭:  লেখক লিখেছেন হাদীসটির সনদ বিষয়ক আলোচনা। অথচ তিনি সনদ সম্পর্কিত কোন আলোচনা এখানে করেন নি। তিনি কয়েকজন ইমাম/মুহাদ্দিস/বিশেষজ্ঞের মন্তব্য উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁদের থেকে সনদটি সহীহ হওয়ার উসূলি পর্যালোচনা উল্লেখ করেন নি। অথচ সনদ বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে রাবী বা বর্ণনাকারীদের মর্যাদা, অবস্থান, পারস্পরিক সম্পর্ক প্রভৃতি মূখ্য বিষয়। যা উক্ত ইমাম/মুহাদ্দিস/বিশেষজ্ঞগণের মন্তব্যের মধ্যে আমরা পেলাম না।

সুতরাং সনদ বিষয়ক পর্যালোচনার দাবী উক্ত উদ্ধৃতির মধ্যে নেই। সুতরাং উপস্থাপনাটি অন্তঃসারশূন্য। লেখক যে পদ্ধতিতে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ঐ একই পদ্ধতিতে জাল হাদীসকেও সহীহ বলার সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি লেখকের উল্লিখিত পদ্ধতি সনদগত পর্যালোচনার মধ্যে গণ্য নয়।

সনদ – এটি ইমাম মাকহুল عن مالك بن يُخامر عن معاد بن جبل رضى الله عنه  এর সনদে বর্ণনা করেছেন। অথচ ইমাম মাকহুল মালিক বিন ইয়ুখামিরকে পান নি। ইমাম যাহাবী (রহ) লিখেছেন :

مكحول لَم يلق مالك بن يُخامر

“মাকহুল (রহ) এর সাথে মালিক বিন ইয়ুখামিরের সাক্ষাৎ হয় নি।” (আলবানী’র আহাদিসুস সহীহাহ হা/১১৪৪)

সুতরাং হাদীসটির সনদ মুনক্বাতে‘। আর মুনক্বাতে‘ হাদীস য‘য়ীফ। ইমাম আবূ হাতিম (রহ) লিখেছেন :

هذا حديث منكر بِهاذا الإسناد ، لَم يرو بِهذا الإسناد غير ابى خاليد ولا أدرى أين جاء به

“হাদীসটি এই সনদে মুনকার। আবূ খুলায়েদ ছাড়া কেউ বর্ণনা করে নি। আমি জানি না, সে এটি কোথা থেকে আনলো।” (ঈলাল ইবনে আবী হাতিম : ২০১২)

ইমাম দারা কুতনী (রহ) লিখেছেন :

والحديث غير ثابت

“এই হাদীসটি প্রমাণিত না।” (ঈলালুদ দারা কুতনী ৬/৫১ পৃ:)

লেখক যেসব ইমামদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন এক্ষেত্রে সহীহ বা হাসান হওয়ার পক্ষে তাঁদের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেন নি। হাদীসটির ব্যাপারে যেসব অভিযোগ আছে সেগুলোর জবাব দেয়ারও চেষ্টা করেন নি। আর হাদীসটি যঈফ হওয়ার কারণগুলো সুস্পষ্ট করেছি, ফালিল্লাহিল হামদ।

আব্দুল মালেক  ৮:  বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদীস আস্‌ সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেনঃ

وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث

 

এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়। তারপর আলবানী (রহঃ) ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোন ধরণের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।

পর্যালোচনা  ৮:  শাইখ আলবানী (রহঃ) এ সম্পর্কে পূর্বে লেখক কর্তৃক উল্লিখিত মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর সাথে সম্পর্কিত হাদীসটিকে মৌলিক গণ্য করেছেন এবং নিজেই সেটা মুনক্বাতে হিসাবে উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি সম্পর্কে তাঁর উপস্থাপনা হলোঃ

قال الذهبي: مكحول لم يلق مالك بن يخامر. قلت: و لولا ذلك لكان الإسناد حسنا ، فإن رجاله موثوقون

“ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেন: মাকহুলের সাথে মালিক বিন ইয়ুখামিরের সাক্ষাৎ হয় নি। আমি (আলবানী) বলছি: যদি তা না হতো তবে সনদটি হাসান ছিল। কেননা, বর্ণনাকারীগণ সিক্বাহ।” [আস-সহীহাহ ৩/১১৪৪]

অর্থাৎ স্বয়ং আলবানী (রহঃ) হাদীসটি হাসান হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন নি। আর বর্ণনাকারীগন সিক্বাহ হওয়া সত্ত্বেও সনদ মুনক্বাতে‘ বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে যঈফ। অতঃপর এর সমর্থনে যে সমস্ত হাদীস উল্লেখ করেছেন তার সবকটিই যঈফ। তাছাড়া বর্ণনাগুলো সহীহ মুসলিমের পুর্বে উল্লিখিত প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে বর্ণিত ফযীলতের মোকাবেলায় ১৫ শা‘বানে ঐ একই ফযীলত সুনির্দিষ্ট করাটা অর্থহীন হয়ে যায়। কেননা হাদীসে ফযীলতের লক্ষ্য ও শর্ত হুবহু একই। এ পর্যায়ে সহীহ হাদীসে বর্ণিত প্রতি সপ্তাহের ফযীলতটির মোকাবেলায় যঈফ হাদীস দ্বারা ১৫ শা‘বানের ফযীলতকে সুনির্দিষ্ট করলে পরস্পর বিরোধ দেখা দেয়। এমতাবস্থায় যঈফ হাদীসটি মুনকার হিসাবে সাব্যস্ত হয়। শাইখ আলবানী (রহঃ) এর ছাত্র শাইখ ‘আব্দুল ক্বাদের বিন হাবীবুল্লাহ (রহঃ) ইমাম আবূ হাতিম (রহঃ) এর পুর্বেল্লিখিত উদ্ধৃতিটিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে লিখেছেনঃ

اسناده منكر موضوع كما قال أبو حاتم وعنه ابنه عبد الرحمن فى العلل كما مضى ، ولا يصلح للمتابعات والشواهد فضلا أن يكون حجة

“এর সনদটি মুনকার, যেভাবে আবূ হাতিম (রহঃ) থেকে তাঁর ছেলে ‘আব্দুর রহমান কর্তৃক ‘ঈলালে’র সূত্রে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটিকে মুতাবিয়াত, শাওয়াহেদ বা ফযীলতের ক্ষেত্রে হুজ্জাত গণ্য করাটা সঙ্গত হয় না।”

[التصوف فى ميزان الْبحث والتحقيق للسندى ج1، صـ 555]

আব্দুল মালেক  ৯:  ইদানিং আমাদের কতক সালাফী বা গাইরে মুকাল্লিদ; বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরণের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিস্‌ফি মিন শাবান) এর কোন ফযীলতই হাদীস শরীফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শাইখ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।

পর্যালোচনা  ৯:  পূর্বের পর্যালোচনাতে সুস্পষ্ট হয়েছে, শাইখ আলবানী কর্তৃক বিভিন্ন যঈফ হাদীসের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মূল হাদীস হিসাবে বর্ণিত মুনক্বাতে‘ হাদীসটি গ্রহণ করার সুযোগ নেই। তাছাড়া ঐ ফযীলতটি প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুনির্দিষ্ট হওয়াই যঈফ হাদীস দ্বারা ১৫ শা‘বানে ঐ একই ফযীলতকে সুনির্দিষ্ট করাটা অর্থহীন হয়। আর এ কারণেও হাদীসগুলো মুনকার বা প্রত্যাখ্যাত।

আব্দুল মালেক  ১০:  কেননা, তাদেরকে আলবানী (রহঃ) এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতে দেখা যায়। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শাইখ ইবনে বাযের অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্‌কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে?

এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?

পর্যালোচনা  ১০:  পূর্বের আলোচনাতে প্রমাণ হয়েছে, এক্ষেত্রে শাইখ আলবানী (রহঃ) এরই ভুল হয়েছে। সাধারণ বিবেক বুদ্ধির দাবীও এটাই যে, তাঁর বা তাঁদের সঠিক উপস্থাপনাকে মানতে হবে এবং ভুলটিকে ছাড়তে হবে। মুজতাহিদের ইজতিহাদ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এটাই।

আব্দুল মালেক  ১১:  আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্‌তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শাইখ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

পর্যালোচনা  ১১:  উক্ত ইমামদের ত্রুটিগুলোর কিছু বিশ্লেষণ পুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। ত্রুটিগুলো কেবল হাদীসের সনদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা সহীহ হাদীসের বিরোধী বিধায় ইমাম আবূ হাতিম মুনকার বলেছেন (ঈলাল ইবনে আবী হাতিম ১২, ২০)। ইমাম দারাকুতনী (রহঃ) বলেছেন, প্রমাণিত নয় (গায়ের সাবেত) [ঈলাল দারা কুতনী ৪/৫১]।

এই পর্যায়ে যারা ফযীলতের পক্ষে বলেছেন তাঁরা গবেষণাগত ভুল করেছেন। আর এটাই ভারসম্যপূর্ণ উপস্থাপনা। আর ভুলের ব্যাপারে তাঁদের অনুসরণ জায়েয নয়।

আব্দুল মালেক  ১২:  এই রাতের আমল

উল্লেখিত হাদীস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদীস পেশ করছি।

হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশাঞ্চ অথবা বলেছেন, ও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিঞ্চেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন ইরশাদ করলেন,

هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]

ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেনঃ

هذا مرسل جيد

এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে – এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা, কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্‌তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

পর্যালোচনা  ১২:  মুরসাল হাদীসও মুনক্বাতে‘ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এই হাদীসটিও য‘য়ীফ। তাছাড়া সহীহ মুসলিমে বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদীসটি এর ফযীলতকে ম্লান করে দেয়। কেননা উক্ত ফযীলতের সুযোগটি প্রত্যেক সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রয়েছে। ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) উক্ত উদ্ধৃতির একটু পর লিখেছেনঃ

و قد روي في هذا الباب أحاديث مناكير رواتها قوم مجهولون

“এ সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে মনকার হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে যা অজ্ঞাত ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন।” (শু‘আবুল ঈমান, ঐ)

শাইখ আলবানী (রহঃ) লিখেছেনঃ হাদীসটি যঈফ। (দ্র: যঈফ তারগীব ওয়াত তারহীব)

চলবে ইন-শা-আল্লাহ্‌ !

পরবর্তী পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখকঃ কামাল আহমাদ

পরিবেশনায়ঃ সত্যান্বেষী  রিসার্চ  টীম

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।


Leave a comment