সালাফীগণ কি আল্লাহর জন্য স্থান নির্ধারণ করেছেন ?

Salafigon Ki Allahor Jonno Sthanসালাফীগণ ‘আল্লাহর জন্য স্থান নির্ধারণ করেছেন’ এটা সালাফীদের প্রতি একটি মিথ্যা আরোপ।  এটা প্রত্যাখ্যান করেছেন শাইখ নাসির উদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)।

প্রশ্নকারী:  কুরুবিওন মালাইকারা কারা?

আলবানী:  কুরুবিওন মালাইকারা কারা? আমি যতদুর জানি তাতে কোন হাদীসের মধ্যে এই নামে কোন মালাইকার সন্ধান পাই নি এবং তিরিশ বছরের হাদীস গবেষণায় শত শত মেনুস্ক্রিপ্ট পড়েছি কিন্ত এই নামটি আমার সামনে আসে নি। হজ্জ্ব এর সময় মিনায় প্রথম আমি তাদের নাম শুনি।

মুননার দিনগুলোর এক শান্ত, সুন্দর রাতের বেলা আমি আমাদের কিছু মিশরীয়, সিরিয়ান এবং আনসারুস সুন্নাহর কিছু ভাইয়ের সাথে বসে ছিলাম। তখন এক শাইখ আসলেন এবং বসে আমাদের কথা শুনছিলেন। আমার বক্তব্য শেষ হওয়ার কিছুক্ষন পরে তিনি আলোচনায় অংশগ্রহণ করলেন এবং কথাবলা শুরু করলেন।

আমার নিকট শুস্পষ্ট হলো যে তিনি আল-আযহার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষালাভ করেছেন এবং সালাফী দাওয়াহ বা তাওহীদের দাওয়াহের প্রতি তার ঘৃণা রয়েছে। তিনি সকল মুসলিম জাহানের তাওহীদী গ্রুপ (সালাফী) – তারা সিরায়ান হোক, মিশরীয় হোক বা অন্যকোন স্থানেরই হোক, তাদের প্রতি আরোপিত কিছু মিথ্যা প্রচারে আক্রান্ত ছিলেন।  তিনি সমালোচনা করা শুরু করলেন যে ওয়াহবী দাওয়াহ ভাল কিন্তু [সমস্যা হল] তারা আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করেন।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সেটা কিভাবে?

তিনি বললেন যে তারা [সালাফীরা] বলে যে সর্বশক্তিমান, মহান আল্লাহ ……… সুবহানাল্লাহ্‌! তিনি যেন কুরআনে ভুল থাকা সাব্যস্ত করছেন, অথচ তিনি তা উপলব্দি করতে পারছেন না – তিনি বললেন, ‘তারা [সালাফীরা] বলে আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন।’

আমি (আলবানী) বললাম: এটা কি তাদের কথা না সকল জাহানের মালিক আল্লাহর কথা?

তিনি নিজেকে ঠিক করে বললেন যে তারা [সালাফীরা] এই আয়াতকে ব্যাখ্যা করে বলেন যে আল্লাহ তার আরশের উপর বসেছেন।

আমি তাকে বললাম: হে আমার ভাই, তাদের এবং তাদের বিরোধিতাকারীদের মধ্যে এটা পার্থক্য না যে আল্লাহ তার সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যেহেতু তারা এ ব্যাপারে একমত যে এটা অসত্য। বরং পার্থক্য সেখানে যে [আয়াতে উল্লেখিত] ইস্তিওয়া শব্দ ব্যাখ্যা করা নিয়ে। ইস্তিওয়ার সঠিক অর্থ ইস্তীলা [জয় করলেন] হবে? না ইস্তিওয়ার সঠিক অর্থ ইস্তা’লা [উপরে উঠলেন] হবে? সুতরাং আমি বিষয়টি নিয়ে বিশদভাবে কথা বলা শুরু করলাম।

এবং স্বাভাবিকভাবে উক্ত বিষয়ে সালাফী আকিদার সারাংশ হল যে আল্লাহর একটি বৈশিষ্ট্য হলো তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আর তিনি আমার এই কথাটি ধরলেন এবং বললেন, ‘এটা [বিশ্বাস করা] কি সম্ভব যে মহিমান্বিত সর্বশক্তিমান আল্লাহ আরশের উপরে রয়েছেন? এরূপ বলার মাধ্যমে তো আপনারা আল্লাহর জন্য কোন স্থান নির্ধারণ করছেন।’  সুতরাং আমি তাকে বললাম, ‘না, এটা আপনাদের পক্ষের এক ভুল এবং আমরা আমাদেরকে সর্বশক্তিমান, মহামান্বিত আল্লাহর জন্য স্থান নির্ধারণ করার বিশ্বাস থেকে মুক্ত ঘোষনা করি, বরং তিনি সর্বোচ্চ, সবচেয়ে মহান।’

এরপর তার সাথে আমি ডিবেট শুরু করি…….

আলবানীঃ আপনি কি একমত যে যখন কিছুর অস্তিত্ত্ব ছিল না তখনও আল্লাহ ছিলেন?

আযহারী শাইখঃ অবশ্যই!

আলবানীঃ যখন আল্লাহ ছিলেন তখন কি তাঁর আরশ ছিল?

আযহারী শাইখঃ না।

আমি তার সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে আরো এগিয়ে গেলাম এবং বললামঃ আমরা এখন জমিনের উপর আছি, আমাদের উপরে কি আছে?

আযহারী শাইখঃ আসমান।

আলবানীঃ এরপর?

আযহারী শাইখঃ দ্বিতীয় আসমান।

আমরা এভাবে চালিয়ে গেলাম সপ্তম আসমান পর্যন্ত। তারপরও আমি জিজ্ঞেস করলাম সপ্তম আসমানের উপরে কি আছে?

আযহারী শাইখঃ আরশ।

আমি বললাম, আরশের উপর কি আছে? আর এখানেই আসল সে আলোচিত বিষয়টি।

আযহারী শাইখঃ কুরুবিওন মালাইকাগণ।

ফলে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম আমি এই নামটি শুনলাম। আমি বললাম, ‘কি? কুরুবিওন মালাইকাগণ আরশের উপরে আছেন? আমরা জানি যে আরশের উপরে সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন যা পূর্বে উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে এবং সালাফগণ এই ব্যাখ্যাই করেছেন যে তিনি আরশের উপরে উঠেছেন, অর্থাৎ সমূন্নত হয়েছেন। এর উপর ভিত্তি করেই বলা হয়:

“এবং আরশের মালিক আরশের উপরে রয়েছেন কিন্তু এটা বলা ব্যাতিরেখে যে তিনি কোন স্থানে রয়েছেন অথবা [আরশের সাথে] সম্পর্কিত হয়ে রয়েছেন।”

সুতরাং আল্লাহর কোন জমিনের প্রয়োজন নেই, কিন্তু প্রথমবারের মতো আমি ঐ কুরুবিওন মালাইকাদের নাম শুনলাম যারা আরশের উপরে রয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার কি কোন আয়াত জানা আছে যা আপনার কুরুবিওন মালাইকার আরশের উপর থাকার কথা প্রতিষ্ঠা করে?’

আযহারী শাইখঃ না।

আলবানী: ঠিক আছে। কোন হাদীস কি আছে যেখানে এই মালাইকাদের কথা বলা হয়েছে?

আযহারী শাইখঃ না।

আলবানীঃ তাহলে এই আকিদা আপনি কোথায় পেলেন যেখানে বলা হয়েছে আরশের উপর কুরুবিওন মালাইকাগণ আছেন?

আযহারী শাইখঃ এটা আমাদের অভিজাত আল-আযহার ইউনিভার্সিটির শাইখগণ শিক্ষা দিয়েছেন।

সুতরাং, আমি বললাম কি অদ্ভুত ব্যাপার! আমি জানি যে কোথা থেকে আযহারী বিদ্বানগণ তাদের ছাত্রদের শিক্ষা দেয়, তাদের লেকচারে আকিদা ও উসুল আল-ফিকহ যার সাথে সম্পর্কিত তাহল  – তাদের আকিদার বিষয়টি সহীহ আহাদ হাদিসের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।’ তাহলে কিভাবে তারা আকিদার বিষয়টি শিক্ষা দেয় যা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ নেই? কিভাবে আপনি এগুলো বিশ্বাস করবেন?

তিনি হতবাক হয়ে গেলেন। আমি বলে যাচ্ছিলাম এবং তাকে বললাম, ‘চিন্তা করুন যে ঐ মালাইকাগণ যাদের আপনি কুরুবিওন নামে উল্লেখ করলেন তারা আরশের উপরে রয়েছেন – তাদের উপর কি আছে?

তিনি চুপ হয়ে গেলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ়…..

এবং ইতিমধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে আমি তাকে বলেছি যে, যখন কিছুই ছিল না তখন আল্লাহ ছিলেন…….. সুতরাং তাঁর সাথে কিছুই ছিল না। তারপর তিনি বললেন, ‘হও! এবং সৃষ্টি হল। যদি আমরা এই উপসংহারে পৌঁছাই যে আমরা এখনও আরশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি নাই এবং আপনার মতে আরশের উপর মালাইকা রয়েছেন। তাহলে এরপরে আরশের উপর কি আছে? কিছু নাই, কোন কিছুই নাই?

আযহারী শাইখঃ না, কিছুই নাই।

সুতরাং আমি বললাম যেহেতু আমরা একমত হলাম যে সউচ্চ, মহামান্বিত আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করার পূর্বে কোন কিছুর অস্থিত্ব ছিল না……. আল্লাহ ছিলেন এবং তাঁর সাথে কিছুই ছিল না….. সুতরাং আল্লাহ কোনকিছু সৃষ্টি করার পূর্বে [তিনি ব্যাতিত] কিছুই ছিল না….. সুতরাং যখন আপনার জ্ঞান আপনাকে এই সিদ্ধাতে পৌঁছাচ্ছে যে আরশের উপর কুরুবিওন মালাইকাগণ রয়েছেন এবং এই নিখিল বিশ্বের কোন কিছুই এর উপরে নাই, সেখানে সৃষ্টির জগৎ শেষ হয়ে গেছে……… [সেই অনুসারে] যখন সালাফীগণ বলেন যে মহামন্বিত, সুউচ্চ আল্লাহ আরশের উপর উঠলেন বা সমূন্নত হলেন – তখন কেন তাদেরকে সর্বশক্তিমান, মহামণ্বিত আল্লাহর জন্য বিশ্বমণ্ডলের কোন স্থান নির্ধারণ করার দোষে অভিযুক্ত করছেন যেখানে আরশের উপর বিশ্বমণ্ডলের কিছুই নেই?

যেহেতু বিশ্বমণ্ডলী সীমাবদ্ধ এবং আমাদের মতে বিশ্বমণ্ডলীর সীমা যেখনে শেষ আর সেই সর্বোচ্চ অংশে রয়েছে [আল্লাহর] আরশ এবং আপনার মতে আরশের উপরে রয়েছে কুরুবিওন মালাইকাগণ এবং তারপর আর (সৃষ্টিজগতের) কিছুই নেই।

সুতরাং আকল ও টেক্সট (কুরআন-হাদীস) উভয় দিকে থেকেই সঠিক আকিদা হলো সেই আকিদা যা সালাফে সালেহীনগণ পোষণ করতেন, – তারা বলেন নি যে আল্লাহ কোন স্থানে রয়েছেন, যেমন আপনারা অমূলকভাবে সালাফীদের উপর আরোপ করেন। কারন আরশের উপর কোন স্থান নেই, সেখানে সম্পূর্ণভাবে কোন সৃষ্টির অস্তিত্ত্ব নেই, আরশের উপর আছেন শুধুই আল্লাহ, তিনি মহিমান্বিত, সুউচ্চ।

কিন্তু আপনাদের কি ব্যাপার যখন আপনারা সালাফীদের উপর আভিযোগ তুলে পালিয়ে যান অথচ তারা প্রকৃত পক্ষে তা থেকে মূক্ত – যেহেতু [আমরা বলি যে] আল্লাহ কোন স্থানের মধ্যে নেই, কারণ আরশের উপর কোন বিশ্বমণ্ডলী বা স্থান নেই, আল্লাহ আরশের উপর রয়েছেন। কিন্তু আপনাদের কি ব্যাপার আপনারা মহামণ্বিত, সউচ্চ আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, অর্থাৎ তাঁর সিফাতসমূহকে দৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করার ঘোষনা দেওয়া – সেটা হবে সম্পুর্ণভাবে তাঁর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য মূক্ত এবং তাঁর কোন গুনাবলী সৃষ্টির কোন গুনাবলীর সাথে সাদৃশ্য আরোপ না করেই, কারণ তিনি এই বিশ্বমণ্ডলীতে নেই, [সম্পূর্ন আলাদা]।

সুতরাং এটা কিভাবে হয় যখন আপনারা বলেন আল্লাহ সবজায়গায় বিরাজমান? আপনি তাঁকে তাঁর বিশ্বমণ্ডলের ভিতরে সীমাবদ্ধ করছেন, অথচ তিনি তা সৃষ্টি করেছেন যখন এটার কোন অস্তিত্ব ছিল না? সুতরাং আপনিই তো মুশাব্বিহাহ এবং আপনিই তো মুজাসসিমাহ!

আর আমরা সালাফীগণ তাদের থেকে ভিন্ন কিছু নই, যারা আল্লাহ যা বলেছেন সেটা মেনে চলেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনকিছুই তাঁর মতো নয়, এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’ [৪২:১১] এবং এই আয়াতের উপর, (এই আয়াতের অর্থের) শুরু এবং শেষের উপর ভিত্তি করে আমরা তাঁকে ঘোষনা করি, তিনি সুউচ্চ, – সম্পূর্ণভাবে তিনি তাঁর সৃষ্টির সাদৃশ্য থেকে মূক্ত এবং আমরা কোন সৃষ্টির গুণাবালী তাঁর প্রতি আরোপ করি না। আমরা তারা সিফাতসমূহকে তাঁর মহামান্বিত এবং গৌরবান্বিত হওয়ার জন্য যেমন মানায় তেমনভাই বিশ্বাস করি।

[ফাতাওয়া জেদ্দাহ, ১৭ নং টেপ]

অনুবাদঃ  সত্যান্বেষী  রিসার্চ  টীম

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।


Leave a comment